Pages

সহিংসতা চালাতে অজুহাত হিসেবে হরতাল

দেশে সহিংসতা চালানোর জন্য হরতালকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা পর্ষদের আহ্বায়ক খুশি কবির।

শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপ লাউঞ্জে হরতালের নীতিমালা ও আইন বিধান প্রণয়ন শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বেসরকারি সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা পর্ষদ এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সংগঠনের আহ্বায়ক খুশি কবির বলেন, হরতালকে একটা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সহিংসতা চালানো হচ্ছে। হরতাল ডাকা হচ্ছে একদিন আর হামলা শুরু হয় তার আগের দিন। এটা একটা স্ববিরোধী আচারণ।

তিনি বলেন, হরতাল মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু সেটা যদি মানুষের মাঝে অকল্যাণ বয়ে আনে তাহলে অবশ্যেই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

গোলটেবিল আলোচনায় আলোচকের বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হরতালের মাঝে অসুস্থ রাজনীতির চর্চা দেখা যায়। শুধু হরতালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রাজনীতি আচরণের ওপর একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা করা উচিত। শুধু হরতাল নিয়ে কাজ করা হলে রোগের সিনড্রোম নিয়ে কাজ করা হবে। হরতালে অংশগ্রহণ ও বিরোধীতা তা যেন স্বেচ্ছাপ্রণীত হয়। এটা যেন চাপিয়ে দেওয়া না হয়।

হরতালের ফলে সহিংসতা হওয়ার কারণে তরুণ প্রজন্মদের মাঝে রাজনীতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দোষটা আসলে হরতালের না। দোষটা হলো হরতালের অপব্যবহারের। হরতালকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতা তরুণ প্রজন্মের মাঝে রাজনীতি ও হরতাল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের রাজনীতির কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা।

যারা হরতাল করে ও আবার যারা প্রতিরোধ করে তারাও সহিংসতা চালায়। ফলে রাজনীতিটাই একটা সহিংসতায় পরিণত হয়। এর মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এর মধ্যে ঢুকে যায়।

তিনি আরও বলেন, অবশ্যই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে হরতালের আওয়াতমুক্ত রাখতে হবে।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, হরতাল একটা প্রতিবাদ কিন্তু এটাকে সামনে রেখে সহিংসতা চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে দেশের উন্নয়নের জন্য হরতাল ডাকা হচ্ছে। কিন্তু দেশের গাড়ি, রেল পুড়িয়ে হরতালের চেয়ে অন্যায় দাবি আর কিছু হতে পারে না। আমি তো রাস্তার উল্টো দিকে গাড়ি চালিয়ে হরতাল চালাতে পারবো না।

তিনি বলেন, যখন কোনো রাজনৈতিক দল পরাজিত হয় তখন সেই দলটি যে ভোট পায় সেটাই আসল ভোট। দেখা যায়, শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ পর‌্যালোচনা করে ভোট দেয়। কিন্তু তাদের চিন্তা চেতনার কথা কেউ ভাবেন না।

ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, হরতাল সংশ্লিষ্ট সরাসরি আইন নেই। তবে সহিংসতা সম্পর্কে আইন রয়েছে। আমাদের কাছে যে আইন রয়েছে তা হরতাল প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। কোনো রাজনৈতিক দলই সহিংসতা কম করেনি। আমার গণতান্ত্রিক অধিকার কোনটি আর সহিংসতা সম্পর্কে পরিষ্কার হওয়া দরকার।

গোলটেবিলের শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অনন্ত আহম্মেদ। এতে তিনি হরতালের ইতিহাস, পূর্ব পাকিস্তানের হরতাল, স্বাধীন বাংলাদেশে হরতাল, হরতালের নেতিবাচক প্রভাব, হরতালের অন্যান্য ক্ষতিকর দিক, হরতালের সহিংসতা, জাতীয় সংসদে হরতাল সম্প‍ৃক্ত বিল, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশ, হরতাল ও আন্তর্জাতিক আইন, বাংলাদেশের সংবিধান, হরতাল সম্পর্কে জনসাধরণের মতামতসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

মূল বক্তব্যে তিনি জানান, হরতাল একটি মৌলিক অধিকার এবং হরতালকে কিছুতেই অবৈধ ঘোষণা করা যাবে না। একই সাথে হরতালের সহিংসতা বন্ধের জন্য একটি নীতিমালা ও আইনি বিধান কাঠামো করা অত্যন্ত যৌক্তিক এবং সাংবিধানিক ভাবেই করা সম্ভব এবং তা গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারকে খর্ব করবে না বরং সমৃদ্ধ করবে। হরতালের সহিংসতার দায়িত্ব নিতে হবে হরতাল আহ্বানকারীকে। হরতালের দাবি হতে হবে জাতীয় স্বার্থে।

মূল বক্তব্যে আরও ‍উল্লেখ করা হয়, হরতাল সম্পর্কিত প্রস্তাবিত নীতিমালা তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল আলোচনায়। নীতিমালার মধ্য অন্যতম হলো হরতাল ডাকার আগে জনগণকে হরতালের দাবি সম্পর্কে জানানো, জনমত গঠন, হরতালের প্রচার ও জনগণের স্বাভাবিক জীবনের প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। অনুষ্ঠানে হরতালের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও উল্লেখ করা হয়।

Share this:

Post a Comment

 
Copyright © Kutubi Web 12. Designed by OddThemes